৪৪ তম বিসিএস ক্যাডার নির্বাচনে করণীয়
৪৪ তম বিসিএস ক্যাডার নির্বাচনে করণীয়
বিসিএসে জেনারেল ও টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল—এই দুই ক্যাটাগরিতে মোট ২৬টি ক্যাডার রয়েছে।
একজন প্রার্থী সব জেনারেল ক্যাডার (৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মোট জেনারেল ক্যাডার ১৩টি) এবং তাঁর পঠিত বিষয় সম্পর্কিত টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল ক্যাডারে (এটি কারো ক্ষেত্রে শূন্য, কারো ক্ষেত্রে এক বা একাধিক হতে পারে) আবেদন করতে পারবেন।
আরো সহজ করে বললে, একজন প্রার্থী আবেদন ফরমের শিক্ষাগত যোগ্যতার ছক পূরণ করলেই পরের পৃষ্ঠায় তাঁর জন্য প্রযোজ্য ক্যাডার তালিকা দেখতে পাবেন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ৪৪তম বিসিএসে একজন প্রার্থী আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করলে মোট ১৩টি ক্যাডারে (শুধু জেনারেল ক্যাডার) আবেদন করতে পারবেন (আইন বিষয়ের কোনো টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল ক্যাডার নেই)।
আবার একই বিসিএসে এমবিবিএস সম্পন্ন করা একজন প্রার্থী মোট ১৪টি ক্যাডারে আবেদন করতে পারবেন (১৩টি জেনারেল ক্যাডার+স্বাস্থ্য ক্যাডার) এবং পুরকৌশল (সিভিল) বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করা একজন প্রার্থী মোট ১৭টি ক্যাডারে আবেদন করতে পারবেন (১৩টি জেনারেল ক্যাডার, গণপূর্ত ক্যাডার, রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডার, সড়ক ও জনপথ ক্যাডার এবং কারিগরি শিক্ষা ক্যাডার)।
ক্যাডার বণ্টন প্রক্রিয়া:
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ৯০০ নম্বর ও মৌখিক পরীক্ষার ২০০ নম্বর যোগ করে মোট ১১০০ নম্বরের ওপর প্রার্থীদের যে মেধাতালিকা তৈরি করা হয়, তার ওপর ভিত্তি করেই ক্যাডার পদগুলো বণ্টন করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—সম্মিলিত মেধাতালিকায় যে প্রার্থী প্রথম হবেন, তিনি পছন্দক্রমের প্রথম ক্যাডারটিই পাবেন।
সম্মিলিত মেধাতালিকায় ১১তম প্রার্থীর প্রথম পছন্দ পররাষ্ট্র ক্যাডার। এরই মধ্যে পররাষ্ট্র ক্যাডারের পদ বণ্টন শেষ (পররাষ্ট্র ক্যাডারের মোট পদ ১০টি বিবেচনায়)।
তখন দেখা হবে তাঁর পছন্দক্রমের দ্বিতীয় ক্যাডার কোনটি। যেহেতু আগের ১০টি পদই পররাষ্ট্র ক্যাডার দ্বারা পূরণ হয়েছে, অন্য কোনো ক্যাডারে কাউকেই সুপারিশ করা হয়নি, তাই প্রশাসন, পুলিশ বা অন্য যেকোনো ক্যাডার তিনি সহজেই পেয়ে যাবেন।
ধরুন, সম্মিলিত মেধাতালিকার ১০০তম প্রার্থীর পছন্দক্রম পররাষ্ট্র>পুলিশ>প্রশাসন। দেখা গেল, আগের ৯৯ জন প্রার্থী থেকে পররাষ্ট্র ও পুলিশ ক্যাডারের সব পদ পূরণ করা হয়ে গেছে।
তখন দেখা হবে—ওই প্রার্থীর পছন্দক্রমের তৃতীয় ক্যাডার অর্থাৎ প্রশাসন ক্যাডারের কোনো পদ শূন্য আছে কি না। শূন্যপদ থাকলে তিনি প্রশাসন ক্যাডারই পাবেন। তা না হলে এভাবে ধাপে ধাপে তাঁর পছন্দক্রমের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ ক্যাডারগুলোতে পদ শূন্য আছে কি না দেখা হবে।
ক্যাডারগুলোর দায়িত্ব ও কার্যাবলি
► প্রশাসন, পুলিশ ও আনসার ক্যাডার : এই ক্যাডারগুলোতে চ্যালেঞ্জিং কর্মজীবন এবং আইনের প্রয়োগ ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে।
নিয়মিত প্রমোশন, কর্মক্ষেত্রে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষাপটে সার্ভিসগুলোর সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে। তবে কর্মক্ষেত্রে প্রচুর কাজের চাপ ও নানা ধরনের সংকট মোকাবেলা করতে হয়। আইন প্রয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত এই ক্যাডারগুলো অনেক প্রার্থীই পছন্দের শীর্ষস্থানে রাখেন।
► কর, কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ, নিরীক্ষা ও হিসাব এবং বাণিজ্য ক্যাডার : প্রথম তিনটি ক্যাডার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে।
কর ক্যাডার রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ করগুলো (আয়কর, ভ্রমণকর, দানকর ইত্যাদি) এবং কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ ক্যাডার পরোক্ষ করগুলো (কাস্টমস, এক্সাইজ, ভ্যাট ইত্যাদি) সংগ্রহ করে।
অন্যদিকে নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডার সব রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব পরিপালন করে থাকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাণিজ্য ক্যাডার রাষ্ট্রের আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই সার্ভিসগুলো তুলনামূলক দপ্তরকেন্দ্রিক, তাই কার্যালয়ের বাইরের সংকট নিয়ে ভাবতে হয় না।
বেতনের বাইরে বৈধ আর্থিক প্রণোদনা, বৈদেশিক ট্রেনিং ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় অনেকেই এই ক্যাডারগুলোকেও পছন্দক্রমের প্রথম দিকে রাখেন।
উল্লেখ্য, ৪৪তম বিসিএসের আবেদনে ক্যাডার তালিকায় ‘কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ’ রাখা হয়নি।
► অন্যান্য ক্যাডার (পররাষ্ট্র, খাদ্য, তথ্য, সমবায়, রেলওয়ে, ডাক ও পরিবার পরিকল্পনা)
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চাইলে দেশের বাইরে পদায়ন উপভোগ করলে পররাষ্ট্র ক্যাডার একটি ভালো অপশন হতে পারে। তবে এই ক্যাডারে পদের সংখ্যা খুব কম থাকে এবং প্রায় সব প্রার্থীই প্রথম পছন্দ হিসেবে দেন।
তাই বলা যায়, পররাষ্ট্র ক্যাডার পেতে হলে পছন্দক্রমের প্রথমেই রাখতে হবে। পররাষ্ট্র ক্যাডার পছন্দক্রমের মাঝে বা শেষে রাখার বিষয়ে কোনো নিষেধ নেই; কিন্তু এতে ভাইভা বোর্ডে প্রার্থীর বিচার-বুদ্ধির অপরিপক্বতাই প্রকাশ পাবে।
খাদ্য, তথ্য, সমবায়, রেলওয়ে, ডাক ও পরিবার পরিকল্পনা— এই ক্যাডারগুলোতে জেলা ও উপজেলা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। চাকরির সুযোগ-সুবিধা মাঝামাঝি ধরনের। তাই প্রার্থীরা সাধারণত এই সার্ভিসগুলো পছন্দক্রমের মাঝামাঝির দিকেই রাখেন।
► টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল ক্যাডার :
একাডেমিক জ্ঞানকে সরাসরি কর্মজীবনে প্রয়োগ করার সুযোগ চাইলে টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল ক্যাডার একজন প্রার্থীর জন্য সঠিক পছন্দ হতে পারে। অনেক প্রফেশনাল ক্যাডারেই নিজের জেলায় পোস্টিং দেওয়া হয়, কর্মক্ষেত্রে পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগও বেশি। তবে ক্ষেত্রবিশেষে সুযোগ-সুবিধার কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
বলে রাখা ভালো, টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল ক্যাডারে আগ্রহী হলে, বোথ ক্যাডারে আবেদন করে টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল ক্যাডার প্রথম পছন্দ দেওয়ার চেয়ে শুধু টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল ক্যাডারে আবেদন করাই ভালো।
একজন প্রার্থী কম প্রতিযোগিতাপূর্ণ টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল ক্যাডার পেয়ে গেলে চয়েস তালিকায় নিচের দিকে দেওয়া জেনারেল ক্যাডারগুলো সাধারণত কোনো কাজেই আসে না!
ক্যাডার চয়েসের বিবেচ্য বিষয়:
► নিজের আগ্রহ : ক্যাডার চয়েস দেওয়ার আগে প্রার্থীর ব্যক্তিগত আগ্রহ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ক্যাডার তালিকাই হতে পারে তাঁর জন্য সবচেয়ে সেরা পছন্দক্রম।
► সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি : বেতন ও দৃশ্যত সুযোগ-সুবিধা সমান হলেও কিছু সার্ভিসের প্রতি সামাজিক আগ্রহ বা কম আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। অনেক প্রার্থীই সামাজিক মর্যাদার বিষয় মাথায় রেখে ক্যাডার পছন্দক্রমগুলো সাজিয়ে থাকেন।
► সুযোগ-সুবিধা : সাধারণত প্রার্থীরা এই বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন। চাকরির ধরনের ওপর নির্ভর করে অনেক সময় সার্ভিসগুলোতে গাড়ি, কোয়ার্টার, সাপোর্টিং স্টাফ, আর্থিক প্রণোদনা, বৈদেশিক প্রশিক্ষণের সুযোগ ইত্যাদির তারতম্য হয়।
কিন্তু একজন চাকরিপ্রার্থীর কাছে এই সুযোগ-সুবিধাটা মুখ্য বিবেচ্যও হতে পারে।
► একাডেমিক জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্ক : অনেক প্রার্থীই কর্মক্ষেত্রে একাডেমিক জ্ঞান প্রয়োগ করতে পছন্দ করেন। আবার অনেকে একাডেমিক বৃত্ত থেকে বের হয়ে ভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও কৌতূহলী থাকেন।
ক্যাডার চয়েসের আগে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সার্বিক বিষয়ে বিস্তর জেনে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
► কর্মপরিবেশ : চাকরি ক্ষেত্রে কর্মপরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটিও সার্ভিস টু সার্ভিস ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই ক্যাডার চয়েসের আগে এ ব্যাপারে জেনে নেওয়া জরুরি।
► পদায়ন : চাকরির ধরন অনুযায়ী কিছু ক্যাডারে নিজ জেলায় কখনো পদায়ন হয় না, আবার কিছু ক্যাডারে শূন্য পদ সাপেক্ষে নিজ জেলায় পদায়ন সম্ভব। পরিবারকে সময় দেওয়াসহ নিজ জেলায় কর্মস্থলকে অগ্রাধিকার মনে করলে সেই সার্ভিসগুলোকেই বেছে নিতে হবে।
সর্বশেষ করণীয়
ক্যাডার চয়েসের বিবেচ্য বিষয়গুলো অনুধাবন করে এবং প্রতিটি ক্যাডারের দায়িত্ব, কার্যাবলি ও সুযোগ-সুবিধা জেনে আবেদনের আগেই ক্যাডার চয়েসের একটি খসড়া তৈরি করে নিন।
এরপর মনে করুন, আপনার সামনে সব চাকরি রাখা হলো, আপনি কোনটি করবেন, সেগুলো পছন্দ অনুসারে সাজিয়ে নিন। যদি আপনি ভালো কোনো চাকরিতে কর্মরত থাকেন, এই অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার ছাড়া অন্য যেগুলোতে চাকরি হলেও যোগ দেবেন না বলে ঠিক করে রেখেছেন, সেগুলো এড়িয়ে যেতে পারেন। তবে আপনি বেকার থাকলে বা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলে (চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে) সব ক্যাডারই পছন্দক্রমে রাখা উচিত। কোনো নির্দিষ্ট ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলে পরেও তুলনামূলক যাচাই করে আপনি জব চেঞ্জ করতে পারবে।